পুরুষ কখন বালেগ হয়।

 

পুরুষ কখন বালেগ হয়? জানুন বিস্তারিত


মানুষের জীবনে শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। শৈশব থেকে কৈশোরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে শরীর ও মনের ভেতরে ঘটে নানা পরিবর্তন। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে যখন একজন ছেলে বালেগ হয়, তখন থেকেই তার উপর নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতসহ সমস্ত ফরজ ইবাদতের দায়িত্ব বর্তায়। কিন্তু প্রশ্ন হলো—পুরুষ আসলে কখন বালেগ হয়?


এই লেখায় আমরা ইসলামিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে বিষয়টি বিস্তারিত জানবো।



---


বালেগ হওয়ার অর্থ কী?


‘বালেগ’ শব্দটি এসেছে আরবি থেকে। এর অর্থ হলো প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া বা দায়িত্বশীলতার স্তরে পৌঁছানো। ইসলামী শরীয়তে, ছেলে বা মেয়ে যখন বালেগ হয় তখনই তারা নৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয়ভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে বিবেচিত হয়।


অর্থাৎ, একজন পুরুষ বালেগ হওয়ার পর থেকে তার প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।



---


ইসলামী দৃষ্টিতে পুরুষ কখন বালেগ হয়?


ইসলামে ছেলেদের বালেগ হওয়ার কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ উল্লেখ আছে।


১. স্বপ্নদোষ (বীর্যপাত হওয়া)


যদি কোনো ছেলে ঘুমের মধ্যে বা জাগ্রত অবস্থায় প্রথমবার বীর্য নিঃসরণ করে, তবে সেই মুহূর্ত থেকেই সে বালেগ গণ্য হবে। এটিই সবচেয়ে মূল লক্ষণ।


২. যৌন অঙ্গের লোম গজানো


যখন যৌন অঙ্গের চারপাশে মোটা ও কালো লোম জন্মাতে শুরু করবে, তখনও সেটি বালেগ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।


৩. অন্যান্য শারীরিক পরিবর্তন


কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যাওয়া।


বুক প্রশস্ত হওয়া।


শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে লোম গজানো।


উচ্চতা দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া।



৪. বয়সের হিসাব


যদি উপরোক্ত লক্ষণগুলো না দেখা দেয়, তবে বয়সের হিসাব অনুযায়ী একজন ছেলে ১৫ বছর পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বালেগ হিসেবে গণ্য হবে (চন্দ্রবর্ষ অনুযায়ী)।



---


চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে বালেগ হওয়ার সময়


চিকিৎসাবিজ্ঞানে ছেলেদের বালেগ হওয়াকে বলা হয় Puberty বা কৈশোরে প্রবেশ। সাধারণত:


১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ছেলেদের শরীরে পরিবর্তন শুরু হয়।


এই সময় তারা স্বপ্নদোষের অভিজ্ঞতা পেতে শুরু করে।


শরীরে হরমোনের প্রভাবে লোম, কণ্ঠস্বর এবং যৌন আকাঙ্ক্ষায় পরিবর্তন আসে।


প্রায় ১৮ বছর বয়সের মধ্যে সবাই পরিপূর্ণভাবে প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে যায়।




---


পুরুষ বালেগ হওয়ার লক্ষণসমূহ


১. মুখ ও বুকে দাড়ি-গোঁফ গজানো।

২. বগলে ও যৌন অঙ্গে লোম জন্মানো।

৩. কণ্ঠস্বর ভেঙে ভারী হয়ে যাওয়া।

৪. ঘুমের মধ্যে বা জাগ্রত অবস্থায় বীর্যপাত হওয়া।

৫. যৌন আকাঙ্ক্ষা বা অনুভূতি তৈরি হওয়া।



---


কেন বালেগ হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ?


বালেগ হওয়ার পর থেকে একজন পুরুষের উপর ইসলামী শরীয়তের সব দায়িত্ব আরোপিত হয়। যেমন:


নামাজ পড়া ফরজ হয়ে যায়।


রোজা রাখা বাধ্যতামূলক হয়।


পিতা-মাতার আনুগত্য করা ওয়াজিব হয়।


ভালো-মন্দ সব কাজের হিসাব লেখা শুরু হয়।


হালাল-হারাম মেনে চলার দায়িত্ব তার উপর বর্তায়।



অন্যদিকে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের দিক থেকেও বালেগ হওয়ার পর ছেলেরা মানসিক ও শারীরিকভাবে নতুন একটি স্তরে প্রবেশ করে। তাই অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানকে এই সময় সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া।



---


অভিভাবকদের করণীয়


১. সন্তান যখন বালেগ হওয়ার পথে, তখন তাকে ইসলামি শিক্ষা ও নৈতিকতার দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

২. শারীরিক পরিবর্তন নিয়ে সন্তান যেন ভয় না পায়, সেজন্য অভিভাবকের সহমর্মী আচরণ করা জরুরি।

৩. কিশোর বয়সে যৌন শিক্ষার সঠিক দিকনির্দেশনা দিলে সন্তান ভুল পথে যাবে না।

৪. নামাজ, রোজা ও ইবাদতের গুরুত্ব বোঝাতে হবে।



---


সারসংক্ষেপ


পুরুষ বালেগ হওয়ার প্রধান লক্ষণ হলো বীর্যপাত হওয়া। তবে যদি তা না ঘটে, তাহলে বয়সের হিসেবে ১৫ বছর পূর্ণ হলেই ইসলামী শরীয়তে সে বালেগ গণ্য হবে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সাধারণত ১১ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে ছেলেরা বালেগ হয়ে যায় এবং ১৮ বছরের মধ্যেই শারীরিক পরিবর্তন সম্পূর্ণ হয়।


👉 তাই বালেগ হওয়ার বিষয়টি শুধু শারীরিক পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি ধর্মীয় দায়িত্ব ও সামাজিক জীবনেরও এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা।



Post a Comment

0 Comments