মহিলারা কেন বার বার নার্ভাস হয়

 


মহিলারা কেন বার বার নার্ভাস হয়? কারণ, সমাধান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা


ভূমিকা


নার্ভাস হওয়া আমাদের সবার জীবনেরই একটা সাধারণ অভিজ্ঞতা। তবে গবেষণা বলছে, নারীদের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের আগে, নতুন মানুষের সামনে দাঁড়ালে কিংবা হঠাৎ অচেনা পরিস্থিতিতে নারীরা কেন বার বার নার্ভাস হয়ে পড়েন—এটাই অনেকের মনে বড় প্রশ্ন। আসলে এর পেছনে রয়েছে নানা শারীরিক, মানসিক, হরমোনাল ও সামাজিক কারণ। আজকের লেখায় আমরা বিস্তারিত জানবো মহিলারা কেন বারবার নার্ভাস হয় এবং এর কার্যকর সমাধান কী হতে পারে।



---


নার্ভাসনেস আসলে কী?


নার্ভাসনেস হলো এক ধরনের মানসিক চাপ বা অ্যাংজাইটি প্রতিক্রিয়া। যখন আমরা কোনো পরিস্থিতিকে ভয় পাই, অনিশ্চিত বোধ করি বা ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা করি, তখন শরীর ও মনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়। যেমন:


হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া


হাত কাঁপা


অতিরিক্ত ঘাম হওয়া


মাথা ঘুরানো বা বমি বমি লাগা


মনের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হওয়া



এই লক্ষণগুলো নারীদের মধ্যে অনেক বেশি সাধারণ, কারণ তাদের জীবনযাপন ও হরমোনাল প্রক্রিয়া পুরুষদের থেকে ভিন্ন।



---


মহিলারা কেন বার বার নার্ভাস হয়?


১. হরমোনাল পরিবর্তন


নারীদের শরীরে প্রতি মাসেই হরমোনের ওঠানামা হয়। মাসিক চক্র, গর্ভাবস্থা, সন্তান জন্মের পর এবং মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মানসিক অবস্থা অস্থির হয়ে পড়ে।


ইস্ট্রোজেন কমে গেলে মুড সুইং, হতাশা ও নার্ভাসনেস বাড়ে।


প্রোজেস্টেরন বেড়ে গেলে আবার অতিরিক্ত টেনশন ও অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।



২. সামাজিক ও পারিবারিক চাপ


নারীদের সাধারণত একসাথে অনেকগুলো দায়িত্ব পালন করতে হয়—পরিবার সামলানো, সন্তান লালনপালন, অফিসের কাজ, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ইত্যাদি। অতিরিক্ত চাপের কারণে তারা ছোটখাটো বিষয়েও সহজে নার্ভাস হয়ে যান।


৩. আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি


বাংলাদেশসহ অনেক সমাজেই মেয়েদের ছোটবেলা থেকে “লজ্জা পাওয়া” বা “পিছনে থাকা” শেখানো হয়। ফলে অনেকে নিজেদের সক্ষমতা নিয়ে সন্দেহে ভোগেন। নতুন পরিবেশে বা মানুষের সামনে কথা বলতে গিয়ে তারা সহজেই নার্ভাস হয়ে পড়েন।


৪. শারীরিক কারণ


কিছু শারীরিক সমস্যাও নার্ভাসনেস বাড়াতে পারে—


আয়রন ঘাটতি (অ্যানিমিয়া) → দুর্বলতা ও অস্থিরতা তৈরি করে।


ভিটামিন বি কমে যাওয়া → স্নায়ু দুর্বল হয়, ফলে নার্ভাসনেস বাড়ে।


থাইরয়েড সমস্যা → অতিরিক্ত হরমোন নিঃসরণের কারণে দুশ্চিন্তা বাড়ে।


অনিদ্রা → মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে ছোটখাটো বিষয়েও নার্ভাস হয়ে যায়।



৫. মনস্তাত্ত্বিক কারণ


অনেক নারীর মধ্যে অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার থাকে। এর ফলে তারা কোনো বিষয়কে বাস্তবতার চেয়ে অনেক বেশি ভয় পান। অতীতে ঘটে যাওয়া ট্রমাটিক অভিজ্ঞতাও (যেমন: নির্যাতন, ব্যর্থতা বা অপমান) বার বার নার্ভাস হওয়ার কারণ হতে পারে।


৬. পরিবেশগত কারণ


অচেনা জায়গা, চাকরির ইন্টারভিউ, পরীক্ষা, বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠান বা জনসমক্ষে কথা বলার সময় নারীরা সহজেই নার্ভাস হয়ে পড়েন। কারণ তাদের মন সবসময় "আমি কি পারবো?" এই প্রশ্নে অস্থির থাকে।



---


নার্ভাসনেস কমানোর উপায়


🧘 ১. শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন


গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়লে শরীর শান্ত হয়, টেনশন কমে যায়। প্রতিদিন ৫ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে নার্ভাসনেস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আসে।


🏃 ২. নিয়মিত ব্যায়াম


হাঁটা, যোগব্যায়াম, মেডিটেশন—এসব শরীরে হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং মস্তিষ্কে "হ্যাপি হরমোন" নিঃসরণ ঘটায়, যা দুশ্চিন্তা দূর করে।


🍎 ৩. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস


ভিটামিন বি, আয়রন, ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার (যেমন ডিম, মাছ, বাদাম, সবুজ শাকসবজি) খেলে স্নায়ু শক্তিশালী হয় এবং নার্ভাসনেস কমে।


🛌 ৪. পর্যাপ্ত ঘুম


প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘণ্টা ভালো ঘুম নার্ভাসনেস দূর করতে সবচেয়ে কার্যকর।


🗣️ ৫. আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা


নিজের ইতিবাচক দিকগুলো মনে রাখা, নিয়মিত নিজেকে উৎসাহ দেওয়া এবং নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়ার অনুশীলন আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।


❤️ ৬. কাছের মানুষের সাথে কথা বলা


বন্ধু, পরিবার বা স্বামী/সঙ্গীর সাথে নিজের ভয় ও উদ্বেগ শেয়ার করলে মানসিক চাপ অনেকটা হালকা হয়।


👩‍⚕️ ৭. বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া


যদি নার্ভাসনেস প্রতিদিনের জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তবে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সাথে দেখা করা উচিত। প্রয়োজনে ওষুধও দেওয়া হতে পারে।



---


বাস্তব অভিজ্ঞতা


অনেক নারী বলেছেন, তারা প্রথমবার অফিসে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় বা বিয়ের দিন মঞ্চে দাঁড়ানোর মুহূর্তে প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন। তবে ধীরে ধীরে শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন, আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলা এবং আশেপাশের মানুষের সহায়তায় তারা এই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছেন।



---


উপসংহার


নার্ভাসনেস কোনো রোগ নয়, বরং একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবে মহিলাদের জীবনে হরমোন, সামাজিক চাপ ও মানসিক সংবেদনশীলতার কারণে এটি বেশি দেখা যায়। তাই নার্ভাসনেসকে ভয় না পেয়ে সঠিক উপায় অবলম্বন করলে সহজেই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। মনে রাখতে হবে—আপনি একা নন, প্রায় প্রতিটি নারীই জীবনের কোনো না কোনো সময় নার্ভাস হয়েছেন। সঠিক অনুশীলন ও সহায়তায় এটি জয় করা যায়।



---


👉 SEO ট্যাগ সাজেস্ট করা হলো:

নার্ভাসনেস, মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য, মহিলারা কেন নার্ভাস হয়, নার্ভাস কমানোর উপায়, নারীর মানসিক সমস্যা, anxiety in women, নার্ভাসনেস দূর করার টিপস



-

Post a Comment

0 Comments