শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গু‘মের ঘটনায় প্রথমবার দুটি ফরমাল চার্জ দাখিল



📰 শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গু‘মের ঘটনায় প্রথমবার দুটি ফরমাল চার্জ দাখিল

২০২৫ সালের ৮ অক্টোবর বাংলাদেশের রাজনীতি ও বিচার অঙ্গনে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ (ICT-1) এ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়। এই অভিযোগগুলো মূলত গু‘ম, নির্যাতন এবং মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত।

🔹 কী নিয়ে এই অভিযোগ

প্রসিকিউশন পক্ষ জানিয়েছে—
২০০৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে বিরোধী মতাদর্শের বহু ব্যক্তি গু‘ম হন, যাদের অনেকেরই পরবর্তীতে কোনো খোঁজ মেলেনি।
এই ঘটনাগুলো পরিকল্পিত ও সংগঠিতভাবে ঘটানো হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

প্রথম ফরমাল চার্জটি টাস্কফোর্স ফর ইন্টাররোগেশন (TFI) সেল সম্পর্কিত,
আর দ্বিতীয়টি জয়েন্ট ইন্টাররোগেশন সেল (JIC)–এর কার্যক্রম ঘিরে দাখিল করা হয়েছে।

দুই মামলাতেই শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক সিদ্দিকীসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।


🔹 অভিযোগের মূল বিষয়সমূহ

১. বিরোধী রাজনৈতিক কর্মী ও সাংবাদিকদের বেআইনি আটক ও গু‘ম।
২. আটক ব্যক্তিদের গোপন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ ও শারীরিক নির্যাতন।
৩. রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
৪. ভুক্তভোগীদের পরিবারকে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান।
৫. এই পুরো কার্যক্রমের নীতিগত ও প্রশাসনিক অনুমোদন।


🔹 কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ

এটাই প্রথমবারের মতো কোনো বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বা প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে গু‘ম সম্পর্কিত ফরমাল চার্জ দাখিল হলো।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের গু‘ম ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছিল।
ফলে এই অভিযোগ আন্তর্জাতিকভাবে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযোগ দাখিলের অর্থ হলো— আদালত এখন যাচাই করবে, প্রাথমিক প্রমাণ যথেষ্ট কি না। আদালত যদি অভিযোগ গ্রহণ করে, তাহলে বিচার প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে।


🔹 সরকারের প্রতিক্রিয়া

সরকারি পক্ষ বা আওয়ামী লীগের মুখপাত্ররা এই অভিযোগকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, “এই অভিযোগের কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই; এটি আন্তর্জাতিকভাবে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার প্রচেষ্টা।”

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে—
“গু‘মের ঘটনা বহু বছর ধরে বাস্তব ছিল, এখন অন্তত বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে — এটিই ন্যায়বিচারের পথে একটি বড় পদক্ষেপ।”


🔹 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (OHCHR), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ—
তিন সংস্থাই জানিয়েছে, বাংলাদেশের গু‘ম ইস্যু বহুবার আলোচনায় এসেছে, এবং এই অভিযোগগুলো যদি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে তা মানবতাবিরোধী অপরাধের আওতায় পড়তে পারে।


🔹 ভবিষ্যৎ প্রভাব

এই মামলাগুলোর পরিণতি বাংলাদেশের রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপর গভীর প্রভাব ফেলবে।
একদিকে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া— উভয় দিক থেকেই এটি একটি সংবেদনশীল ও ঐতিহাসিক সময়।


🔹 উপসংহার

গু‘ম একটি রাষ্ট্রীয় ও মানবিক ট্র্যাজেডি, যার প্রভাব পরিবার, সমাজ ও জাতি — তিন স্তরেই ছড়িয়ে পড়ে।
এই অভিযোগ প্রমাণিত হোক বা না হোক, ঘটনাটি বাংলাদেশের মানবাধিকার ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা ও স্বচ্ছতার দাবি এখন দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মুখে একটাই কথা—
“গু‘মের বিচার চাই।”



Post a Comment

0 Comments