ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেতন: বিস্তারিত তথ্য, ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট
ডোনাল্ড জন ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ২০২৫ সালে আবারও প্রেসিডেন্টের আসনে ফিরে এসেছেন। অনেকের মনে প্রশ্ন— যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আসলে কত টাকা বেতন পান, এবং ট্রাম্প নিজে কতটা নিয়েছেন বা কীভাবে তা ব্যবহার করেছেন? চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত ও নিরপেক্ষ তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বেতন কাঠামো
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের বেতন কংগ্রেস দ্বারা নির্ধারিত হয়। বর্তমানে (২০০১ সাল থেকে) প্রেসিডেন্টের বার্ষিক বেতন $৪০০,০০০ মার্কিন ডলার। এর সাথে আরও কিছু অতিরিক্ত ভাতা ও সুবিধা যুক্ত থাকে—
-
ব্যক্তিগত খরচের ভাতা — প্রতি বছর $৫০,০০০ (করমুক্ত)।
-
ভ্রমণ ভাতা — আনুষ্ঠানিক ভ্রমণের জন্য $১০০,০০০।
-
বিনোদন ভাতা — রাষ্ট্রীয় বা আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে ব্যবহারের জন্য $১৯,০০০।
-
সরকারি বাসস্থান — হোয়াইট হাউসে থাকা এবং এর সমস্ত সুযোগ-সুবিধা বিনামূল্যে।
-
সরকারি পরিবহন — প্রেসিডেন্টের জন্য বিশেষ বিমান Air Force One, হেলিকপ্টার Marine One, এবং সুরক্ষিত গাড়ি ব্যবহারের সুবিধা।
-
নিরাপত্তা ও সুরক্ষা — Secret Service এর সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা।
সব মিলিয়ে বার্ষিক সুবিধার আনুমানিক মূল্য প্রায় $৫৬৯,০০০ মার্কিন ডলার বা তারও বেশি, যদি সমস্ত ভাতা, বাসস্থান ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা হিসাব করা হয়।
ট্রাম্পের বেতন গ্রহণের নীতি
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময়ই ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেতন নেবেন না। যুক্তরাষ্ট্রের আইন অনুযায়ী প্রেসিডেন্টকে ন্যূনতম $১ বেতন নিতে হয়, তাই ট্রাম্প প্রতি বছর আনুষ্ঠানিকভাবে $১ নিয়েছেন এবং বাকি পুরো বেতন বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও প্রকল্পে দান করেছেন।
তিনি এই অর্থ দান করেছেন যেমন—
-
স্বাস্থ্য বিভাগে (Health and Human Services)
-
প্রতিরক্ষা বিভাগে (Department of Defense)
-
জাতীয় উদ্যান সেবা (National Park Service)
-
বিভিন্ন শিক্ষা ও মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রামে
এর ফলে তার মেয়াদকালে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট বেতন থেকে মোট $১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিভিন্ন সরকারি কাজে দিয়েছেন।
কেন ট্রাম্প বেতন দান করেছিলেন?
ট্রাম্প একজন বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী এবং রিয়েল এস্টেট টাইকুন হিসেবে রাজনীতিতে আসার আগে থেকেই অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন। তিনি বলেছেন, তার কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়া অর্থ উপার্জনের জন্য নয়, বরং “দেশ সেবা” করার সুযোগ। বেতন দান করার মাধ্যমে তিনি নিজের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে চেয়েছেন এবং প্রতীকীভাবে দেখাতে চেয়েছেন যে তিনি করদাতাদের অর্থ নিজের জন্য ব্যবহার করতে চান না।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বেতন ইতিহাসে ট্রাম্পের অবস্থান
ট্রাম্পই একমাত্র প্রেসিডেন্ট নন যিনি বেতন দান করেছেন। অতীতে হার্বার্ট হুভার এবং জন এফ. কেনেডিও তাদের বেতন দান করেছিলেন। তবে ট্রাম্পের দান ছিল ধারাবাহিক এবং প্রতিটি ত্রৈমাসিকের চেকে নির্দিষ্ট সরকারি খাতে প্রদান করা হয়েছে, যা সংবাদমাধ্যমে প্রায়শই আলোচিত হয়েছে।
সমালোচনা ও বিতর্ক
যদিও ট্রাম্পের বেতন দান অনেকের কাছে প্রশংসনীয়, সমালোচকরাও ছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার অন্য আয়ের উৎস (যেমন হোটেল ও ব্যবসা) থেকে তিনি অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন। তবে বেতন দানের বিষয়টি তথ্যভিত্তিক এবং সরকারি নথিতে প্রমাণিত।
ভবিষ্যতে ট্রাম্পের বেতন গ্রহণ
২০২৫ সালে আবার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি এবারও পুরো বেতন দান করবেন। ফলে দ্বিতীয় মেয়াদেও তিনি একই নীতি অনুসরণ করছেন। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এমন একজন নেতা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন, যিনি নিয়মিতভাবে নিজের বেতন সরকারি প্রকল্পে দিয়েছেন।
সারসংক্ষেপ
-
বেসিক বেতন: বছরে $৪০০,০০০ মার্কিন ডলার
-
অতিরিক্ত ভাতা: ব্যক্তিগত খরচ ($৫০,০০০), ভ্রমণ ($১০০,০০০), বিনোদন ($১৯,০০০)
-
মোট সুবিধা: আনুমানিক $৫৬৯,০০০ বা তারও বেশি
-
ট্রাম্পের নীতি: বেতন গ্রহণ না করে সরকারি খাতে দান
-
দানের পরিমাণ: প্রথম মেয়াদে $১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় সম্পূর্ণ বেতন)
-
ইতিহাসে স্থান: বেতন দানকারী কয়েকজন প্রেসিডেন্টের একজন
উপসংহার
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেতন ও সুবিধা যুক্তরাষ্ট্রের আইন দ্বারা নির্ধারিত হলেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে তা গ্রহণ না করে দান করেছেন। এটি যেমন তার প্রচারণার প্রতিশ্রুতি পূরণের উদাহরণ, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক বিরল দৃষ্টান্ত। যদিও তার সামগ্রিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, তবুও বেতন দানের বিষয়টি প্রমাণিত ও নথিভুক্ত, যা তাকে ইতিহাসে অনন্য করে তুলেছে।
0 Comments