ডাকসুর ব্যালট ৫ পৃষ্ঠার: শিক্ষার্থীরা যেভাবে ভোট দেবেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ এখন তুঙ্গে। অনেক বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন বড় একটি ব্যালট পেপার—যেটি ৫ পৃষ্ঠার। এতে থাকবে ডাকসুর বিভিন্ন পদ, অনুষদভিত্তিক প্রতিনিধি এবং হলভিত্তিক প্রতিনিধি পদের নাম। নতুন ভোটাররা যাতে বিভ্রান্ত না হন, সে কারণেই নির্বাচন কমিশন বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দিয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—এবার ভোটাররা কোনো সিল মারবেন না, বরং পছন্দের প্রার্থীর ঘরে ক্রস (✘) চিহ্ন দিয়ে ভোট প্রদান করবেন।
এখন দেখা যাক ধাপে ধাপে কীভাবে শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন, কী কী বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে এবং কেন এই পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি।
---
🔹 ১. ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের নিয়ম
ভোট প্রদানের প্রথম ধাপ হলো সঠিক সময়ে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হওয়া। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নির্দিষ্ট হলে বা অনুষদে ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করে দেওয়া হবে।
ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র (স্টুডেন্ট আইডি কার্ড) দেখাতে হবে।
দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আপনার নাম ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে নেবেন।
তালিকায় নাম নিশ্চিত হলে ব্যালট পেপার হাতে পাবেন।
এ পর্যায়ে কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভিড় সৃষ্টি না করে লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাই শোভন আচরণ।
---
🔹 ২. ব্যালট পেপারের ধরন
ডাকসুর ব্যালট এবার একক পৃষ্ঠা নয়, বরং ৫ পৃষ্ঠায় বিভক্ত।
প্রথম কয়েক পৃষ্ঠায় থাকবে ডাকসুর শীর্ষ পদগুলো—সভাপতি, সহ-সভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস), সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস), কোষাধ্যক্ষ, সাহিত্য সম্পাদক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক, ক্রীড়া সম্পাদক ইত্যাদি।
অন্য পৃষ্ঠাগুলোতে অনুষদভিত্তিক প্রতিনিধি ও হলভিত্তিক প্রতিনিধি পদের প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক থাকবে।
এ কারণে ব্যালটটি আকারে অনেক বড় এবং বহুপৃষ্ঠার। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি পৃষ্ঠায় মনোযোগ সহকারে ভোট দিতে হবে।
---
🔹 ৩. ভোট দেওয়ার নিয়ম: ✘ চিহ্ন ব্যবহার
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এবার ভোট প্রদানের ধরণ। সাধারণ নির্বাচনে আমরা অনেক সময় সিল মেরে থাকি। কিন্তু ডাকসুর এ নির্বাচনে ব্যালটে সিল নয়, বরং ✘ চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে।
প্রতিটি প্রার্থীর নামের পাশে একটি ফাঁকা ঘর থাকবে।
আপনার পছন্দের প্রার্থীর ঘরে কলম দিয়ে ✘ চিহ্ন দিতে হবে।
প্রতিটি পদে কেবলমাত্র একজন প্রার্থীকে চিহ্নিত করা যাবে।
একাধিক প্রার্থীর ঘরে চিহ্ন দিলে ভোটটি বাতিল হবে।
এই নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ভুলভাবে চিহ্ন দিলে আপনার ভোট গণনায় আসবে না।
---
🔹 ৪. কেন ✘ চিহ্ন, সিল নয়?
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, হঠাৎ করে কেন সিল বাদ দিয়ে ✘ চিহ্নে ভোট নেওয়া হচ্ছে? এর কয়েকটি কারণ রয়েছে—
1. ভোটের স্বচ্ছতা: সিল ব্যবহার করলে কালি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, ফলে ভুল ভোট গণনা হতে পারে। ✘ চিহ্নে এই সমস্যা হয় না।
2. সহজ নিয়ন্ত্রণ: ব্যালট বহুপৃষ্ঠার হওয়ায় সিল মারার সময় ভাঁজ বা অযথা দাগ লেগে ভোট বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কলম দিয়ে চিহ্ন দিলে তা স্পষ্ট থাকে।
3. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড: অনেক গণতান্ত্রিক দেশে এ ধরনের ✘ বা ✔ চিহ্ন ব্যবহৃত হয়, যা ভোটারদের জন্যও সহজবোধ্য।
---
🔹 ৫. ভোট দেওয়ার সময় যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে
ভোট প্রদানের সময় শিক্ষার্থীদের কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে—
কলম যেন সঠিকভাবে কালো বা নীল কালি লেখে, তা আগে যাচাই করুন।
✘ চিহ্ন স্পষ্টভাবে ঘরের ভেতর দিতে হবে।
কোনোভাবেই ব্যালটে নিজের নাম, স্বাক্ষর বা অতিরিক্ত দাগ টানা যাবে না।
ভোট দেওয়ার সময় ব্যালট ভাঁজ করলে কালি লেগে যেতে পারে, তাই শেষে ভাঁজ করুন।
কারো প্রভাব বা চাপের মুখে নয়, নিজের বিবেক অনুযায়ী ভোট দিন।
---
🔹 ৬. ব্যালট বাক্সে ভোট প্রদান
সবগুলো পৃষ্ঠায় ভোট সম্পন্ন হলে ব্যালট ভাঁজ করে নির্ধারিত ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে।
ব্যালট বাক্স কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে সিল করা থাকবে।
আপনার ভোট একবার ব্যালট বাক্সে চলে গেলে তা আর পরিবর্তন করা যাবে না।
তাই ভোট দেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই করে নিন, সব পৃষ্ঠায় পছন্দের প্রার্থীর ঘরে ✘ চিহ্ন দিয়েছেন কিনা।
---
🔹 ৭. ভোট শেষে করণীয়
ভোট সম্পন্ন হলে শান্তভাবে কেন্দ্র ত্যাগ করা উচিত। কারো সঙ্গে উচ্ছ্বাস বা উত্তেজিত আচরণ না করে নিয়ম মেনে ভোট শেষে বাইরে আসাই উত্তম।
কারো সঙ্গে নিজের ভোটের তথ্য প্রকাশ করবেন না।
অন্যকে প্রভাবিত করা বা উসকানি দেওয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে।
ভোটের পরিবেশ শান্ত ও স্বচ্ছ রাখতে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
0 Comments