ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: মুক্তির লড়াই নাকি নতুন দখলদারিত্ব

 


ডাকসু নির্বাচন ২০২৫: মুক্তির লড়াই নাকি নতুন দখলদারিত্ব


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে ডাকসু (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ) সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা দখল করে রেখেছে। এটি শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের সাংগঠনিক অধিকার ও নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্র নয়, বরং দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। দীর্ঘ সময়ের স্থবিরতার পর ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আবারো আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে—২০২৫ সালের ডাকসু নির্বাচন কি সত্যিই মুক্তির লড়াই, নাকি নতুন দখলদারিত্বের কৌশল?



---


মুক্তির লড়াইয়ের প্রত্যাশা


গণতান্ত্রিক চর্চা: ডাকসু নির্বাচন ছাত্রসমাজের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চর্চার সুযোগ তৈরি করে। দীর্ঘদিন পরে নির্বাচন হলে শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে।


ছাত্রস্বার্থ রক্ষা: বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক পরিবেশ, আবাসন সমস্যা, নিরাপত্তা, ফি বৃদ্ধি ও অন্যান্য ইস্যুতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে নির্বাচিত ডাকসু।


রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্ব: বাংলাদেশের রাজনীতিতে অনেক বড় নেতা ডাকসুর মাধ্যমেই উঠে এসেছেন। তাই নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনা ও নেতৃত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্র হিসেবে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


মুক্ত চিন্তার ক্ষেত্র: ডাকসু যদি নিরপেক্ষভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পাবে, যা বর্তমানে অনেকটা সীমিত হয়ে পড়েছে।




---


নতুন দখলদারিত্বের শঙ্কা


দলীয় প্রভাব: বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির বড় সমস্যা হলো অতিরিক্ত দলীয় প্রভাব। যদি ক্ষমতাসীন বা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের আধিপত্য কায়েম করতে চায়, তাহলে নির্বাচন ছাত্রসমাজের স্বার্থে নয়, বরং দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হবে।


সহিংসতা ও ভীতি: ডাকসু নির্বাচন বরাবরই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। দখলদারিত্ব, হল দখল, অস্ত্রের ঝনঝনানি—এসব আবার ফিরে আসার শঙ্কা আছে।


শিক্ষার্থীর বদলে সংগঠন: প্রকৃত ছাত্রনেতারা উঠে আসতে না পেরে কেবল দলীয় সংগঠনের মনোনীত প্রার্থীরাই নেতৃত্বে চলে আসতে পারে।


প্রতিনিধিত্ব সংকট: সৎ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা যদি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারে, তাহলে নির্বাচন হবে শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।




---


সামনে কোন পথ?


ডাকসু নির্বাচন ২০২৫ নিয়ে এখন মূল প্রশ্ন হলো—এটি কি শিক্ষার্থীদের জন্য গণতান্ত্রিক মুক্তির প্ল্যাটফর্ম হবে, নাকি আবারও একটি গোষ্ঠীর ক্ষমতা কায়েমের হাতিয়ার হবে?


সত্যিকার অর্থে মুক্তির লড়াই চাইলে প্রয়োজন—


সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন।


দলীয় প্রভাবমুক্ত স্বাধীন পরিবেশ নিশ্চিত করা।


শিক্ষার্থীদের মতামতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া।


ছাত্ররাজনীতিকে জাতীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত রেখে, প্রকৃত ছাত্রস্বার্থের প্রতি দায়বদ্ধ করা।




---


উপসংহার


ডাকসু নির্বাচন শুধু একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন নয়, বরং এটি বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা দিতেও পারে। এখন দেখার বিষয়, ২০২৫ সালের নির্বাচন কি সত্যিই ছাত্রসমাজের মুক্তির জয়গান গাইবে, নাকি আবারও দখলদারিত্বের নতুন অধ্যায় রচনা করবে।

Post a Comment

0 Comments