।বিএনপি–জামায়াত নিয়ে কঠিন অঙ্কের ফাঁদে এনসিপি
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও নতুন হিসাবের অঙ্ক দেখা দিয়েছে। একদিকে পুরনো শক্তি বিএনপি ও জামায়াত, অন্যদিকে নতুন আলোচিত দল এনসিপি (ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি) — তাদের অবস্থান এখন রাজনীতির জটিল সমীকরণে। অনেকে বলছেন, এই সমীকরণই আজ “কঠিন অঙ্কের ফাঁদ” তৈরি করেছে, যেখানে এনসিপি একদিকে সুযোগ পাচ্ছে, অন্যদিকে ঝুঁকিও বাড়ছে।
---
🔹 এনসিপির উত্থান: নতুন আশার প্রতিচ্ছবি
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকেই রাজনীতিতে নতুন বিকল্প খুঁজছিলেন। সেই বিকল্প হিসেবেই উঠে এসেছে এনসিপি — যারা দাবি করছে তারা “নাগরিক রাজনীতি” করতে চায়, কোনো পুরনো ধাঁচের দল নয়।
এনসিপির মূল বক্তব্য হলো:
> “আমরা ক্ষমতার রাজনীতি নয়, জনগণের আস্থার রাজনীতি করতে চাই।”
এই স্লোগানই তাদের জনপ্রিয় করে তুলেছে বিভিন্ন অঞ্চলে। বিশেষ করে ২০২4 সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর অনেক মানুষ মনে করেছিলেন, দেশের রাজনীতিতে নতুন বাতাস দরকার — সেই বাতাসের নাম এনসিপি।
---
🔹 পুরনো শক্তির ছায়া: বিএনপি ও জামায়াতের কৌশল
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে দুই দল — আওয়ামী লীগ ও বিএনপি — মূল রাজনীতির মেরুদণ্ড ধরে রেখেছে। এর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট একটি শক্তিশালী বিরোধী অবস্থানে থেকেছে। কিন্তু নতুন দলের উত্থান তাদের জন্য সহজ নয়।
তাই, অনেক বিশ্লেষকের মতে বিএনপি ও জামায়াত এখন এনসিপিকে “বন্ধুত্বপূর্ণ কিন্তু নিয়ন্ত্রণযোগ্য” অবস্থানে রাখতে চায়।
কেউ বলছেন, বিএনপি চাইছে এনসিপিকে পাশে রেখে “একতরফা আন্দোলনের বৈধতা” পেতে।
আবার জামায়াতের কিছু অংশ এনসিপির সঙ্গে “আদর্শিক ঘনিষ্ঠতা” তৈরি করে নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে চায়।
ফলে এনসিপি এক জটিল সমীকরণের মাঝে পড়েছে —
সহযোগিতা করলে পুরনো রাজনীতির ট্যাগ লাগবে,
না করলে তাদের “অভিজ্ঞতাহীন” বলা হবে।
---
🔹 কঠিন অঙ্কের ফাঁদ: কেন বলা হচ্ছে?
এনসিপির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখা।
যদি তারা বিএনপি বা জামায়াতের সঙ্গে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হয়, তাহলে তাদের নতুনত্ব হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়।
অন্যদিকে পুরোপুরি আলাদা অবস্থান নিলে “সরকারপন্থী” তকমা দেওয়া হতে পারে।
এই অবস্থাকেই অনেকেই বলছেন — “কঠিন অঙ্কের ফাঁদ”।
এনসিপিকে এমনভাবে চলতে হবে যেন তারা পুরনো রাজনীতির হাত থেকে দূরে থাকে, আবার জনগণের সমর্থনও না হারায়।
---
🔹 জনগণের প্রত্যাশা: বিকল্প না বিভাজন?
এনসিপি সম্পর্কে জনগণের মধ্যে দুটি ধারা দেখা যাচ্ছে:
1. আশাবাদী ধারা — যারা মনে করেন, নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বই দেশকে পুরনো রাজনীতির অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে পারে।
2. সন্দেহপ্রবণ ধারা — যারা ভাবছেন, এনসিপিও শেষ পর্যন্ত পুরনো দলের মতো ক্ষমতার রাজনীতিতে মিশে যাবে।
তবে এনসিপি যদি স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সংস্কারমুখী পরিকল্পনা ধরে রাখতে পারে, তাহলে তারা সত্যিকারের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
---
🔹 আগামীর পথ: সুযোগ নাকি পরীক্ষা?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন পরিবর্তনের হাওয়া বইছে। এনসিপি যদি বাস্তবতা বুঝে, জনসম্পৃক্ত রাজনীতি চালু রাখে এবং পুরনো রাজনৈতিক ফাঁদগুলোকে চতুরভাবে এড়িয়ে যেতে পারে, তাহলে তাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল।
কিন্তু যদি তারা অতি দ্রুত জোট বা ক্ষমতার সমীকরণে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তাদের স্বপ্ন থেমে যেতে পারে প্রথম দফাতেই।
---
🔹 উপসংহার:
বিএনপি–জামায়াত ও এনসিপির সম্পর্ক এখন বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ “অঙ্ক”।
এই অঙ্কের ফলাফল নির্ভর করছে কে কতোটা সততা ও দূরদৃষ্টি নিয়ে পথ চলবে তার ওপর।
এনসিপির সামনে সুযোগও আছে, ফাঁদও আছে — এখন সময়ই বলে দেবে তারা কোন পথে যাবে।
#এনসিপি #বাংলাদেশরাজনীতি #বিএনপি #জামায়াত #রাজনৈতিকবিশ্লেষণ #নতুনদল #বাংলাদেশনির্বাচন২০২৫ #নাগরিকরাজনীতি
Post a Comment